স্যাটেলাইট, চার অক্ষরের এই শব্দের বিশদ ব্যবহার সম্পর্কে আপনি হয়তো বা জানেন। তবে আমার মনে হয় আপনার এই জ্ঞান বইয়ের ওই কয়েক লাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসলে জিনিসটাই এমন যে আমরা পড়ার জন্য পড়ি কিন্তু জানতে চাই না। তাই হয়তো আজ এর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল ? এই শব্দটি প্রথম কবে ব্যবহার করা হয়? আর কেনই বা হয় ? এগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। স্যাটেলাইট আধুনিক বিশ্বকে এক বিস্ময়ের মতো করে তুলেছে। কে ভেবেছিল ২০১৮ সালে মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় বসে বাংলাদেশের মানুষের সাথে কথা বলবে। কিন্তু দুর্গাভ্যবশত এই বিস্ময় বিস্ময়ই থেকে যাচ্ছে কেননা আমরা কিছুই জানার আগ্রহ পোষণ করিনা। আজ তাই স্যাটেলাইট সমন্ধে একটি বিশদ আলোচনা ও আপনার জীবনে এটি কি প্রভাব ফেলছে তাই থাকছে। আশা করি এতে করে আপনার জানার আগ্রহ একটু হলেও বাড়বে। সাথেই থাকুন –
স্যাটেলাইট কি ?
স্যাটেলাইটের ইতিহাস সমন্ধে জানার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন সেটি হলো কি এই স্যাটেলাইট ? বিখ্যাত জার্নাল স্পেস এর মতে স্যাটেলাইট হলো মহাকাশের এমন একটি বস্তু যা তার চেয়ে বড় কোনো বস্তুর চারদিকে ঘুরতে থাকে। NASA যেটিকে আরো কিছুটা নির্দিষ্ট করে উপগ্রহ হিসাবে বিশেষায়িত করে। তাদের মতে, স্যাটেলাইট হলো এমন একটি গ্রহ যা কোনো তারকা বা তার চেয়ে বড় গ্রহের চারিদিকে ঘুরতে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি পৃথিবীকে সূর্যের স্যাটেলাইট বলতে পারেন। আবার পৃথিবীর স্যাটেলাইট চাঁদ।
স্যাটেলাইট শব্দটির উৎপত্তি
Satellite কি ? তা জানার পরেই অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, “এর উৎপত্তি কিভাবে হলো ?”
এটি জানার জন্য আপনাকে ফিরে যেতে হবে ১৬১০ সালে। আমাদের সম্মানিত জোহানেস কেপলার স্যার বৃহস্পতির চারদিকে ঘূর্ণায়মান বস্তুগুলোকে নির্দেশ করতে গিয়ে যখন কোনো শব্দ খুজে পাননি। তখন এই শব্দটির ব্যবহার করেন। আর এই বস্তুগুলোকে প্রথম দেখতে পাবেন আরেকজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও । তবে শব্দটার সৃষ্টি কিন্তু আরও ৭০ বছর পূর্বে হয়েছিল কিছু ফরাসি ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ।
স্যাটেলাইটের প্রকারভেদ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মূলত দুই প্রকার। একটি হলো প্রাকৃতিক ও অন্যটি কৃত্রিম। প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলতে এখানে চাঁদ ও অন্যান্য উপগ্রহগুলোকে বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই যা ছিল আছে। আর এগুলোর সংখ্যা গ্রহভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন শনির ৬৩টি কিংবা পৃথিবীর ১টি।
অপরটি হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহ অর্থাৎ যাকে আমরা যাকে আমরা সচরাচর স্যাটেলাইট নামেই অভিহিত করেথাকি। স্যাটেলাইট এখন অনেক পরিচিত হলেও এর অতীত অর্থাৎ ইতিহাস কিছুটা এমন ছিল-
কৃত্রিম উপগ্রহের যাত্রা শুরুর খুব বেশিদিন কিন্তু হয়নি। মাত্র কয়েক দশক আগেই ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রথম স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠায়। যার ডিজাইন করেছিলেন (সের্গেই করোল্লেভ )এবং এটির নাম ছিল স্পুটনিক-১। কিছুদিন পর অর্থাৎ স্পুটনিক-১ পাঠানোর কিছুদিন পরেই ৫৭ সালের ৩ নভেম্বর স্পুটনিক-২ পাঠানো হয়। তবে এই স্যাটেলাইট নিয়ে ঘাটাঘাটি প্রথম কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রই করেছিল ১৯৫২ সালের দিকে। কিন্তু স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের এক বড় পরাজয়ও বলতে পারেন যদিও ২য় তে তারাই উৎক্ষেপণ করে। অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি ১৯৫৮ তে তারা তাদের এক্সপ্লোরার-১ উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়।
এরপর আস্তে আস্তে এর বিস্তার চীন এবং অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় এই সেক্টরে বিপ্লব শুরু হয়। যার প্রমাণ আমরা গত বছরেই পেয়েছি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। আর এখন আকাশে ২০০০+ স্যাটেলাইটের যে বৈপ্লবিক সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন তার শুরুটা ঠিক এমনভাবেই হয়েছিল।
স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ কি কি ধরনের হয়ে থাকে?
স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো যেহেতু আমাদের প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করেই বানানো হয়েছে তাই এগুলোর প্রকারভেদ করতে গেলেও আমাদের এই প্রয়োজনের কথাই আনতে হবে। স্যাটেলাইটগুলোকে মূলত নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
- কম্যুউনিকেশন স্যাটেলাইট – তথ্যের আদান প্রদানের জন্য যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় তাই মূলত কম্যুউনিকেশন স্যাটেলাইটের অন্তর্ভুক্ত। রেডিও ব্রডকাস্টিং কিংবা টেলিভিশনে ছবি দেখার জন্য যে মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম রয়েছে তাও এর আওতাভুক্ত। এতে মূলত ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে সিগন্যাল পাঠানো হয়ে থাকে। কাজের কথা বলতে গেলে প্রথম আর্থ-স্টেশন থেকে সিগন্যাল সর্বপ্রথম স্যাটেলাইটে যায় এরপর স্যাটেলাইট তা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছিয়ে দেয়।
- জিওস্টেশনরাই স্যাটেলাইট – পৃথিবী থেকে ৩০০০০ কিমি উপরে জিও স্টেশনারি অরবিটে এই স্যাটেলাইটগুলোকে স্থাপন করা হতে থাকে। যা যোগাযোগের জন্য উতকৃষ্ট বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এত উচ্চতায় অবস্থান করায় এটি পুরোপুরি পৃথিবীকে ঢাকতে সক্ষম হয় না। যার জন্য এর সাথে ১২০ ডিগ্রি কোণ করে আরো দুটি স্যাটেলাইট রাখতে হয়।
- আর্থ-অবজার্ভেশন স্যাটেলাইট – নাম দেখেই চেনা যায় স্যাটেলাইটটিকে। হ্যাঁ পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণের জন্য মূলত এটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের কখন কোথায় কি হচ্ছে, কোন বনে আগুন লাগলো, কোথায় জোয়ার হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়।
- ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট – ন্যাভিগেশন কথাটির অর্থ হচ্ছে নাব্য বিদ্যা বা নাব্য পথ। অর্থাৎ এ ধরনের স্যাটেলাইট পথ নির্ণ্য় এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে সমুদ্রের মাঝখানে জাহাজের পথ নির্ণয় করতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিমান চলাচলেও এটি ব্যবহার করা হয়।
- মিলিটারি স্যাটেলাইট – এটি মূলত সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি দিয়ে শত্রুর বিভিন্ন কার্যকলাপের উপর নজড় রাখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা যেমন নিউক্লিয়ার মনিটরিং অত্যন্ত জনপ্রিয়।
- ওয়েদার স্যাটেলাইট – ওয়েদার স্যাটেলাইট মূলত আমাদের আবহাওয়া এর খবর দিয়ে থাকে। কোন স্থানে কখন বৃষ্টি হবে। কোথায় কখন ঝড় নামবে ইত্যাদি। এর মাধ্যমে আমরা একটা পূর্বাভাস জেনে আগে থেকেই তার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারি যা অনেক উপকারী। এছাড়াও উপকূল অঞ্চলে কখন ঝড় নামবে তার পূর্বাভাস যদি না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
স্যাটেলাইটের বিভিন্ন অংশ
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মূলত মানুষ ও রোবট দুটো দাড়াই পরিচালিত হয়ে থাকে। আর তবে এদের গঠন ঠিক একই রকম। সব ধরনের স্যাটেলাইটই মোট ৪টি অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো-
- পাওয়ার সিস্টেম বা শক্তি সরবরাহকারী – একটি Satellite চলার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তা মূলত এই পাওয়ার সিস্টেম থেকে সরবরাহ করা হয়। এটা মূলত দুই ধরনের শক্তি সরবরাহ করে থাকে যেমন- সৌরশক্তি ,নিউক্লিয়ার শক্তি।
- কন্ট্রোলিং সিস্টেম – আমরা জানি একটি বাস কিংবা বাইক চালানোর জন্য কন্ট্রোলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাটেলাইটও এর ভিন্ন নয়। এর জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কন্ট্রোলিং সিস্টেম দরকার।
- অ্যান্টিনা – পৃথিবী থেকে আপনি বাইরে যাচ্ছেন তাই বলে কি সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না। আর আপনার এই তথ্য আদান-প্রদানের জন্য অ্যান্টিনা ব্যবহার করা হয়।
- পেলোড বা তথ্যসংগ্রহকারী – আমাদের বেশিরভাগ মহাকাশ অভিজান করা হয় সেখানকার তথ্য যেমন ছবি সংগ্রহ করতে। উক্ত পেলোড আমাদের উক্ত কাজে ব্যবহৃত হয়।
স্যাটেলাইটের কক্ষপথ
পূর্বেই বলা হয়েছিল এই কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট কক্ষপথে রাখতে হয়। যাতে তারা একে অপরের সাথে ধাক্কা না খায়। আর এই কক্ষপথগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এগুলো হলো-
- LEO (Low Earth Orbit) – ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যেই স্যাটেলাইটগুলো ১৬০ কিমি. থেকে ২০০০ কিমি. এর মাঝে অবস্থান করছে তাদেরকে এই ক্যাটাগোরিতে ফেলা হয়। সাধরণত যেই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে বা আর্থ অবজার্ভেশন স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে অবস্থান করছে। কেননা এখান থেকে সব দৃশ্য পরিষ্কার।
- MEO( Mid Earth Orbit) – ২০০০০কিমি. থেকে ঠিক উপরেই তবে ৩৬০০০ কিমি. এর মধ্যে অবস্থানকারী স্যাটেলাইটগুলোই উক্ত ক্যাটেগোরিতে অন্তর্ভুক্ত।
- GEO (Geostationery Earth Orbit) – যোগাযোগের জন্য বা আমাদের মাল্টিমিডিয়া সার্ভিসের জন্য এই কক্ষপথকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এরা সাধারণত ৩৬০০০ এর উপরে অবস্থান করে।
কেন ব্যবহার করা হয় ?
এখন আপনার মনে একটাই প্রশ্ন হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে, “স্যাটেলাইট কেন ব্যবহার হয়?” তাই তো ? আসলেই এত পয়সা খরচ করে স্যাটেলাইট পাঠায়ে দিলাম এর মূল উপকারটা কি তা যদি না জানি তাহলে লাভটা কি ? আমি এন্টেনা বা টাওয়ার ব্যবহার করেও যোগাযোগ করতে পারি।
আসলে আমরা যে টাওয়ার ব্যবহারের কথা বলছি তার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা পৃথিবী কিন্তু সমান গোলাকার নয়। আর সেজন্যই আপনার এই যোগাযোগে অনেক সমস্যা দেখা দিবে। কেননা আপনি যে সিগন্যাল পাঠাবেন তা অনেক উচু স্থানেই বাঁধা পেতে পারে। যা যোগাযোগকে ব্যাহত করবে। এছাড়াও প্রথম দিকে যে কাজটির জন্য এটির উদ্ভব হয় তা হলো পৃথিবীর ম্যাপিং করা। এছাড়াও টিভি কিংবা রেডিও এর যে সিগন্যাল রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ডিজিটাল এই যুগের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত স্যাটেলাইট। পূর্বে এর তেমন কোনো ব্যবহার না থাকলেও এখন তা এক অন্যতম চাহিদা হয়ে দাড়িয়েছে উন্নত বিশ্বের কাছে।
স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে ?
স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে তা আপনার জানা থাকা অত্যাবশক। কেননা আপনি যদি নাই জানেন আপনার বন্ধুর সাথে আপনার তথ্যের আদান-প্রদান কিভাবে হচ্ছে তাহলে তো তা বোকামি। স্যাটেলাইটের কাজটা মূলত আপনার পাঠানো সিগন্যালকে ( ফোন কল কিংবা মেসেজিং) গ্রহণ করে তা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানো। এখানে আপনার পাঠানো সিগন্যালটি উর্ধগামী এবং স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগন্যালটি নিম্নগামী হবে। আর এখানে কাজটা এত দ্রুত হচ্ছে যে আপনি তা ধরতেই পারবেন না। বলা হয়ে থাকে এটা মিলি সেকেন্ডেরও কম সময়ে হয়ে থাকে।
স্যাটেলাইট কিভাবে পাঠানো হয়?
স্যাটেলাইট পাঠানোর জন্য একধরনের মহাকাশযানের সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত এগুলো উৎক্ষেপণ যন্ত্র হিসাবে অভিহিত করা হয় ইংরেজিতে যাকে বলে Launch Vechile । তবে এখানে একটি কিন্তু রয়েছে। সেটা হলো এই মহাকাশযান বা উৎক্ষেপণ যন্ত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিকর্ষজ ত্বরণ ও যানটির গতির ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হয়। যার সমতা রক্ষা না হলে এটি সম্ভব হয় না।
আবার এই মহাকাশযানটিও দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি কেবলমাত্র একবার ব্যবহার করা যায়। তবে অপরটি বারবার ব্যবহার করা হয় একই কাজে। যেটিকে একবার ব্যবহার করা হয় তাকে Onetime Rocket বা অপচয়যোগ্য রকেট ও অন্যটিকে স্পেস শাটল বলা হয়। রকেটের ব্যাপারটি আপনি বিভিন্ন মুভিতে দেখে থাকতে পারেন।
স্যাটেলাইট কেন নিচে পড়ে যায় না ?
- আচ্ছা স্যাটেলাইট তো অনেক উপরে থাকে। সেক্ষেত্রে তো পড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু পড়ে যায় না কেন?
প্রশ্নটা আপনি যার ভিত্তি করছেন সেটি হলো মহাকর্ষীয় টান অর্থাৎ পৃথিবীর দিকে যে আকর্ষণ শক্তি। আর স্যাটেলাইটের উপর যে একটি বল কাজ করে তাও মহাকর্ষ।
কিন্তু স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে এত উচ্চতায় রাখা হয় যা পড়ে যাওয়ার হার কমিয়ে দেয়। আবার বলা হয়ে থাকে এদের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৫ মাইল বা ৮ কিমি হওয়ার কারণেও এরা পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচতে সক্ষম। আবার পৃথিবীর উপরে জিওস্টেশনারি কক্ষপথ স্যাটেলাইটকে উপরে আটকে একটি অন্যতম জায়গা। জিওস্টেশনারি কক্ষপথ মূলত ৩৫৭৮৬ কিলোমিটার (২২২৩৬ মাইল) উচ্চতায় পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের উপরে একটি অঞ্চল। এই উচ্চতায়, পৃথিবীর চারপাশে পতনের হার প্রায় পৃথিবীর ঘূর্ণনের সমান, যা উপগ্রহকে প্রায় ক্রমাগত একই জায়গার উপরে থাকতে দেয়। বুঝতেই পাচ্ছেন এটি কেন উপরে থাকে।
- পৃথিবীতে এখন তো শতাধিক কিংবা তার চেয়েও বেশি স্যাটেলাইট তাহলে সেগুলোর একে-অপরের সাথে সংঘর্ষ হয় না?
আসলেই তো এত এত স্যাটেলাইট এগুলো কখনো ধাক্কা খায় না ? না খায় না। কেননা একেক স্যাটেলাইটের জন্য একেক কক্ষপথ ঠিক করে দেয়া হয়েছে । যাকে কেন্দ্র করে এগুলো ঘুরতে থাকে। তবে এমন না যে ধাক্কা খাওয়ার কাহিনি কখনো ঘটেনি। ২০০৯ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ার দুটো যোগাযোগ স্যাটেলাইট একে অপরের সাথে ধাক্কা খায়। তবে এই কাহিনি মাত্র কয়েকবারই ঘটেছে। সুতরাং তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় হতে পারেনা।
প্রিয় পাঠক-
আমাদের স্যাটেলাইট সম্পর্কিত পর্বে এটুকুই ছিল। এরপরেও যদি আপনি কিছু জানতে চান। তাহলে নিশ্চয় আমাদের কমেন্টবক্সে জানাবেন। নতুন নতুন বিষয় নিয়ে জানতে কার না ইচ্ছা করে বলুন? আর আমরাও চাই আপনারা আরো বেশি জানুন। জানতে হলে তাই সাথেই থাকুন।