প্রোগ্রামিং কি? প্রোগ্রামিং কেনো এবং কি কাজে লাগে? প্রোগ্রামিং কিভাবে করতে হয়? প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি? এরকম হাজারটা প্রশ্ন নিশ্চয় আপনার মাথায় বারবার জেগে উঠে তাইনা? এরকম প্রশ্ন হওয়া খুব স্বাভাবিক, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে আপনি যেখানেই তাকাবেন সেখানেই দেখতে পাবেন প্রোগ্রামিং এর জয়জয়কার এবং সেই সাথে নিত্যদিনের প্রতিটা কাজের সঙ্গে জুড়ে আছে প্রোগ্রামিং। আপনি নিশ্চয় মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে এই লেখাটি পড়ছেন তাইতো?
এই যে আপনি লেখাটি পড়ছেন এখানে সর্ববস্থায় জুড়ে আছে প্রোগ্রামিং। মোবাইল বা কম্পিউটার চালু হওয়া থেকে শুরু করে ব্রাউজার ওপেন করে সর্বক্ষণ.কম এ প্রবেশ করা এবং এই লিংক এ এসে আর্টিকেল পড়া সবকিছুর পেছনে লুকিয়ে আছে হাজার হাজার লাইন কোড। আর আজকের এই লেখাতে আমি আপনাদের দেখাবো এবং বিস্তারিত জানাবো প্রোগ্রামিং কি, এবং কি কাজে লাগে এবং সেই সাথে প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের উত্তর। তাহলে চলুন শুরু করা যাক
প্রোগ্রামিং কি?
এক কথায় যদি বলি, “প্রোগ্রামিং হচ্ছে অনেকগুলা কমান্ডের সমষ্টি”। বুঝেন নাই তাইতো? চলুন একটু ভেঙ্গে ভেঙ্গে ব্যাখ্যা করি। প্রথমত আপনাকে জানতে হবে কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে। প্রথমত কম্পিউটারের মুল কাজের স্টেপ হচ্ছে ৩ টা।
১। ইনপুট নেয়া।
২। ইনপুট কে প্রসেস করা।
৩। প্রসেস কৃত ফলাফল আউটপুট দেখা।
এই তিন ধাপে কাজের প্রথম ইনপুট নেয়ার ধাপ সম্পন্ন হয় কী-বোর্ড, মাউস, মাইক্রোফোন, স্ক্যানার কিংবা ক্যামেরার মাধ্যমে। এদের কে বলা হয় ইনপুট ডিভাইস। অর্থাৎ এদের মাধ্যমে আপনি বাইরে থেকে ডেটা কম্পিউটার কে ইনপুট দেন। এরপরে সেই ডেটা নিয়ে সিপিউ তার প্রসেসরের মাধ্যমে প্রসেস করে। যেমন আপনি যদি একটা ক্যালকুলেটর ৭-২ ইনপুট দেন তাহলে প্রসেসর সেটা প্রসেস করে ফলাফল পাবে ৫। এবং এরপরে সেই ফলাফল আপনাকে আউটপুট দেখানো হবে প্রিন্টার, মনিটর কিংবা অন্য কোন আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে। এই আউটপুট দেখানো ডিভাইসকে বলা হয় আউটপুট ডিভাইস।
কিন্তু এই পুরো প্রসেস এ প্রোগ্রামিং কোথায়? ওয়েট, সত্যি বলতে এখানকার সব ধাপেই আছে প্রোগ্রামিং। যেমন আপনি যখন কীবোর্ড থেকে ৭ প্রেস করবেন তখন কীবোর্ড তো আর সেটা বুঝতে পারবেনা তাইনা? কী-বোর্ড যা করবে তা হচ্ছে, একটা সিগনাল পাঠাবে প্রসেসর এর কাছে। এবং প্রসেসর কে আগে থেকে বলে দেয়া আছে যে, “প্রসেসর কীবোর্ড তোমাকে যখন অমুক সিগনাল দেবে তখন তুমি বুঝবা যে ঐটা ৭ , আর যখন তমুক সিগনাল দেবে তখন বুঝবে যে ঐটা ২” এভাবে প্রতি কী এর জন্য প্রসেসর কে বলা আছে আগে থেকে। এছাড়াও মাউসের সহ সব ইনপুট ডিভাইসের কথায় প্রসেসর জানে। এরপরে প্রসেসর কিন্তু শুধু কি ইনপুট দিচ্ছে এটাই জানেনা বরং আরো জানে যে বিয়োগ করলে কি হবে, যোগ করলে কি হবে এরপরে কিভাবে আউটপুট দিতে হবে সবকিছুই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রসেসর এতসব জানে কিভাবে? কম্পিউটার তো আর মানুষ না তাইনা যে আগে থেকে জানবে। আর মানুষ কেও তো আগে থেকে শিখায়ে দেয়া লাগে তাহলে কম্পিউটার কেও কি শিখানো লাগে?
হ্যাঁ, লাগে। আর শেখানোর নামটাই হচ্ছে প্রোগ্রামিং। প্রসেসর কে কিংবা সহজ করে বললে কম্পিউটার কে আগে থেকে বলে দেয়ার নামই হচ্ছে প্রোগ্রামিং। আর যে আগে থেকে কম্পিউটার কে বলে দেয় সে হচ্ছে প্রোগ্রামার। কিন্তু কথা হচ্ছে কিভাবে বলে দেয়? কম্পিউটারের তো আর কান নেই যে মুখে বললে শুনবে। আর কম্পিউটার তো বাংলা বা ইংরেজি বুঝেনা তাইনা? তাহলে কি করা যায়? হ্যাঁ, এই কাজে আমাদের প্রয়োজন হয় কোনো একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো একটু পরেই। আপাতত জেনে রাখি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কম্পিউটার কে লিখে দেয়ার মাধ্যমে আমরা মূলত কম্পিউটার কে ইন্সট্রাকশন বা বলে দেয়ার কাজ টা করি।
তাহলে এত কথার সারমর্ম কি? সারমর্ম হচ্ছে, “প্রোগ্রামিং হল কিছু ইন্সট্রাকশন এর সমষ্টি। অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রে কি কাজ করতে হবে সেসব কমান্ড এর একটা সমষ্টি। আর যারা প্রোগ্রামিং করে তারা হচ্ছে প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং করা বা ইন্সট্রাকশন দেয়া হয় কোন একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে।”
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি?
আগেই বলেছি কম্পিউটার আমাদের ভাষা বুঝতে পারেনা, তাহলে কম্পিউটার কে ইন্সট্রাকশন কিভাবে দেব? উপায় কি? উপায় আছে, এবং বেশ সহজ উপায় আছে। আগে জানতে হবে কম্পিউটারের ভাষা কি। কম্পিউটারের ভাষা হচ্ছে বাইনারি। শুধু কম্পিউটার না সব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ভাষাই হচ্ছে বাইনারি। আর বাইনারিতে আছে ০ এবং ১। হ্যাঁ, শুধু এই দুটো ডিজিট। আপনি যখন কম্পিউটার কে বোঝাতে যাবেন তখন আপনাকে ০ এবং ১ দিয়ে বোঝাতে হবে। কি ভাবছেন অসম্ভব কঠিন কাজ তাইতো? হ্যাঁ, তাই এই কাজকে সহজ করার জন্য আছে কম্পাইলার। আচ্ছা কম্পাইলার চেনার আগে একটা কাহিনী শুনেন।
মনে করেন, আপনি গেছেন স্পেনে। সেখানে আপনার বাংলা কথা কেউ বুঝে না আবার আপনিও স্প্যানিশ বুঝেন না। এখন যোগাযোগ কিভাবে করবেন? নিশ্চয় তখন এরকম কাউকে দরকার হবে যে আপনার বাংলা কথা স্প্যানিশ এ অন্য লোক টাকে বলে দেবে আবার ওই লোকের স্প্যানিশ কথা বাংলা করে আপনাকে বলে দিবে। সহজ করে আমরা যাদের দোভাষী বলি আরকি। এই কম্পাইলার হচ্ছে দোভাষী। কম্পাইলার আপনার কথা শুনবে এবং সেই কথাকে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ বা বাইনারিতে রূপান্তর করে কম্পিউটার কে দিবে। এবং আপনি কম্পাইলারের সাথে যে ভাষায় কথা বলবেন সেটা হচ্ছে একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা।
যদি, সংক্ষেপে বলি, “কম্পিউটার শুধু বাইনারি বুঝতে পারে কিন্তু বাইনারিতে কম্পিউটারকে কিছু বলা বা কমান্ড দেওয়া কঠিন। সেজন্য আছে কম্পাইলার। আমরা কম্পাইলা কে কোনো একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মাধ্যমে কোনো কমান্ড বলে দেয় আর কম্পাইলার সেটা বাইনারিতে রূপান্তর করে কম্পিউটার কে পাঠায়।”।
এই সারমর্ম থেকে নিশ্চয় এবারে ক্লিয়ার হয়েছেন তাইতো? এখন কথা হচ্ছে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি কি আছে। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উইকিপিডিয়া অনুসারে এখন অবধি আছে ৭০০ এর বেশি আছে। এবং নাম জানা বা না জানা আরো অনেক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ই দিনদিন তৈরি হচ্ছে। তবে এত গুলো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানার কোনো দরকার নেই। একটা জানাই যথেষ্ট। তাছাড়া কোনো একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ একবার শিখলে আর পরের টা শেখা কঠিন কিছুনা। তাহলে চলুন দেখে নিই পরিচিত কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং জেনে নিবো ল্যাঙ্গুয়েজগুলির সম্পর্কে।
সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
“সি ( C )” কে বলা হয় “The Mother of Programming Language” কারণ এটি অনেক প্রাচীন অতচ এখনো অনেক জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে Bell Telephone Laboratory তে ডেনিস রিচি ( হ্যাঁ, যিনি Unix এর ইনভেন্টর সেই ডিনিচ রিচি ) সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেন। এটি একটি স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সবধরনের কাজেই মোটামুটি এটি ব্যবহার করা যায়।
যারা একদম নতুন শুরু করছে প্রোগ্রামিং শেখা তাদের জন্য সি শেখা পারফেক্ট। কারণ সি শিখলে মেমোরি ম্যানেজমেন্ট সহ অনেক বিষয়েই ভালো জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়।
সি++ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
এটা মূলত “সি” প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর ই জাত ভাই। তবে সি থেকে সি++ অনেক অনেক আলাদা। যেমন সি তে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং সিস্টেম কাজ করেনা অতচ সি++ এ করে। আবার সি++ এর সিনট্যাক্স বা লেখার ধরন ও সি থেকে সম্পুর্ন আলাদা।
সি++ দিয়ে গেম বানানো, ওয়েবসাইট বানানো থেকে শুরু ডেস্কটপ অ্যাপ, এন্ড্রোয়েড অ্যাপ বানানো সবই সম্ভব। এছাড়া অপারেটিং সিস্টেম বানাতে তো সি++ এর জুড়ি মেলা ভার।
জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
জাভা হচ্ছে একটা অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যার সবথেকে বেশি ব্যবহার হয় অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এ। আপনি আপনার মোবাইলে যে যে অ্যাপ এখন ব্যবহার করছেন তার ৯০ ভাগ ই যে জাভা দিয়ে বানানো তা চোখ বন্ধ করে বলে ফেলা যায়। যদিও এখন ধীরে ধীরে জাভার প্রভাব অ্যান্ড্রোয়েড এ কমছে তবুও এটা অনেক ভালো একটা চয়েস। এছাড়া ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে জাভা বেশ ভালো একটা চয়েস। আপনি ডেস্কটপ অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রেও জাভা ব্যবহার করতে পারেন।
তবে বলে রাখা ভালো যে জাভা আর জাভাস্ক্রিপ্ট কিন্তু দুই দুনিয়ার জিনিস মানে সম্পুর্ন আলাদা দুইটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। কোন ধরনের সম্পর্ক এদের মধ্যে নাই।
পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
পাইথন হচ্ছে অনেক সহজ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথন এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাইথন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চলে যান এই লিংকে পাইথন কি এবং যেভাবে শিখবেন!!
সি, সি++, জাভা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আছে যেমন পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট, গো, রুবি ইত্যাদি। এদের মধ্যে আমার প্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে পাইথন এবং জাভাস্ক্রিপ্ট।
প্রোগ্রামিং করে কি করা যায়?
আচ্ছা এতক্ষণে এই প্রশ্ন করার আগেই হয়ত আপনি জেনেছেন যে প্রোগ্রামিং করে কি কি করা যায়। তবুও চলুন আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেই। আপনি প্রোগ্রামিং করে-
১। অ্যান্ড্রোয়েড, IOS সব ধরনের মোবাইল এর জন্যই এপ বানাতে পারবেন।
২। যেকোন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের কম্পিউটারের জন্যই সফটওয়ার বানানো সম্ভব।
৩। ইভেন আপনি কমপ্লিট একটা অপারেটিং সিস্টেম ও বানাতে পারবেন।
৪। ওয়েব সাইট বানাতে পারবেন।
৫। রোবট, অটোমেটিক কার সবকিছুই সম্ভব প্রোগ্রামিং করে।
৬। ইলেক্ট্রনিক সব ডিভাইস ই আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন প্রোগ্রামিং করে।
৭। অটোমেটিক গাছে পানি দেয়া থেকে শুরু করে, স্মার্ট হোম সবকিছুই করা সম্ভব প্রোগ্রামিং করে।
এছাড়া আপনার যদি এধরনের ইচ্ছা না থাকে তবুও আপনার প্রোগ্রামিং শেখা দরকার কারণ-
১। গাণিতিক বিভিন্ন সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায় প্রোগ্রামিং করে।
২। বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন আবিষ্কার সম্ভব প্রোগ্রামিং করে।
৩। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখন প্রোগ্রামিং এর আধিপত্য।
এছাড়াও আরো অনেক অনেক কারণ দেখানো সম্ভব যেখানে প্রোগ্রামিং অপরিহার্য। পুরো বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দুনিয়ায় দাড়িয়ে আছে এই প্রোগ্রামিং এর উপর ভর করে।
স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং কি?
স্ট্রাকচার্ড নামটা শুনলেই প্রথমত আমাদের মাথায় আসে “গঠন” এই শব্দ। কারণ স্ট্রাকচার্ড মানেই আমরা জানি গঠন। প্রোগ্রামিং করার অর্থাৎ প্রোগ্রামিং কোড লেখার বেশ অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে। যে কাজের জন্য যেটা সুইটেবল আমরা সেটাই ব্যবহার করি। যেমন ছোট ছোট প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় স্ট্রাকচার্ড মেথড। কেমন সেটা? ওকে, স্ট্রাকচার্ড মেথড হচ্ছে কোড কে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে লেখা।
যেমন আপনি ধরুন একটা ক্যালকুলেটর বানাবেন যেখানে দুইটা সংখ্যা দিলে আর একটা চিহ্ন দিয়ে দিলে যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ সবই করতে পারবে। এখন তাহলে সেটা স্ট্রাকচার্ড পদ্ধতিতে কেমন হবে? ওকে, স্ট্রাকচার্ড পদ্ধতি বলে যে আপনি আপনার প্রোগ্রাম কে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করে নিবেন। যেমন একটা অংশে ইনপুট নেয়ার কোড থাকবে আরেক অংশে থাকবে যোগ করার কোড এভাবে করে নানান কাজের জন্য নানান পার্টে একটা প্রোগ্রাম কে ভাগ করা হয়। কিন্তু এর সুবিধা – অসুবিধা দুটোই আছে
সুবিধাঃ
১। যখন যেই অংস চেঞ্জ করা দরকার সহজেই সেই অংশ চেঞ্জ করা যায়।
২। কোড বুঝতে সহজ হয়।
৩। কমেন্ট করে কোড সাজানো সুবিধা হয়।
অসুবিধাঃ
১। বড় প্রোগ্রাম তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা খুব ঝামেলার।
২। একই কোড একের বেশি বার দরকার হলে সেটা বারবার লিখতে হয়।
৩। কোড প্রয়োজন এর তুলনায় অনেক বেশি সাইজের হয়।
৪। নতুন কোনো ফিচার যুক্ত করতে গেলে পুরো প্রোগ্রাম ক্র্যাশ করার সম্ভাবনা থাকে।
বুঝতেই পারছেন যে সুবিধার চেয়ে যে সিস্টেমের অসুবিধা বেশি সেই সিস্টেম বেশিদিন মানুষ ব্যবহার করবেনা। আর হয়েছেও তাই, স্ট্রাকচার্ড সিস্টেম এখন আর তেমন ব্যবহার হয়না। কারণ এর পরিবর্তে নতুন এবং বেশি সুবিধার জন্য এসে গেছে “অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং” পদ্ধতি। চলুন দেখে নেই সেটা।
অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং কি?
অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং হচ্ছে সম্পুর্ন নতুন এবং অনেক জনপ্রিয় একটা পদ্ধতি। এই সিস্টেমে আপনি পুরোনো সব সমস্যার সমাধান করতে যেমন পারবেন। তেমনি অল্প কিছু অসুবিধাও আছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনার পুর্বে দেখি অবজেক্ট জিনিসটা কি। অবজেক্ট বলতে আমরা বাস্তব দুনিয়ায় সবকিছুকেই বুঝি। কম্পিউটার, মানুষ, গরু সব কিছুই একেকটা অবজেক্ট। আর প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রেও একই বিষয়। এখানেও ভ্যারিয়েবল থেকে শুরু করে লিস্ট , হ্যাশ টেবিল সব কিছুকেই এখানে একেকটা অবজেক্ট হিসেবে ধরা হয়। এবং এঙ্ক্যাপ্সুলেশন, পলিমরফেজম এর মতো অসাধারণ কিছু কনসেপ্ট এর সাহায্যে প্রোগ্রামিং কে অনেক সহজ করা যায়। এবারে চলুন সুবিধা-অসুবিধা গুলো একটু দেখি-
সুবিধাঃ
১। বড় প্রোগ্রাম তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশে ভাগ না করেই সহজে ক্লাসের মধ্যে মেথড হিসেবে কোড লেখা যায়।
২। একই কোড একের বেশি বার দরকার হলে সেটা বারবার না লিখে একই কোড অনেকবার ব্যবহার করা যা।
৩। কোড এর সামগ্রিক সাইজ অনেক কম হয়।
৪। নতুন কোন ফিচার যুক্ত করতে গেলে পুরো প্রোগ্রাম ক্র্যাশ না করেই সহজে যুক্ত করা যায়।
অসুবিধাঃ
১। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়।
২। নতুনদের জন্য শেখার প্রসেস টা একটু কঠিন।
সবকিছু বিবেচনা করে এখন অবধি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড সিস্টেম হচ্ছে প্রোগ্রামিং লাইফ কে সহজ করার বেস্ট পদ্ধতি।
প্রোগ্রামিং শিখতে গেলে কি কি লাগবে?
আচ্ছা আপনি নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন যে প্রোগ্রামিং শেখা কেন জরুরি আর তাই এবারে আপনার মাথায় প্রশ্ন জাগবে যে প্রোগ্রামিং কিভাবে শেখা যায়। কিন্তু প্রোগ্রামিং শেখার জন্য কিছু জিনিস আগে থেকে জানা দরকার, সেগুলো হচ্ছে-
১। একটা কম্পিউটার বা মোবাইল ( অ্যান্ড্রোয়েড বা আইফোন যা কিছু হলেই চলবে )। আর কম্পিউটার একদম সাধারণ মানের হলেই চলবে। যে কম্পিউটার চালু করা যায় সেখানেই প্রোগ্রামিং করা সম্ভব, ফোনের ক্ষেত্রেও একই কাহিনী।
২। বেশ অনেক পরিমাণ ধৈর্য অবশ্যই লাগবে।
৩। পরিশ্রম করার মানসিকতা কারণ প্রোগ্রামিং শেখা সহজ হলেও পরিশ্রম অনেক হয়।
৪। শেখার প্রতি ভালোবাসা।
৫। বুঝে শেখার এবং মুখস্ত কে বিদায় দেয়ার জন্য মানসিকতা।
৬। গুগল করে কোন প্রশ্ন খুঁজে বের করার ক্ষমতা ( থাকলে ভালো না থাকলে আস্তে আস্তে হয়ে যাবে )
তো মোটামুটি এই বিষয়গুলো থাকলেই আপনি একজন ভালো মানের প্রোগ্রামার হতে পারবেন। এখন চলুন দেখি কিভাবে শেখা যায়-
প্রোগ্রামিং কিভাবে শিখবো?
প্রথমত আমি ধরে নিচ্ছি আগে যেটা বললাম অর্থাৎ প্রোগ্রামিং শিখতে কি কি লাগবে সেগুলোর সবই আপনার আছে। এখন আপনি যেহেতু শিখতে চাচ্ছেন তাহলে চলুন সরাসরি আপনাকে কিছু রিসোর্স জানিয়ে দেই।
আমি দেশী সকল আইটি প্রতিষ্ঠানকে প্রমোট বা রিকোমেন্ড করবো না। আপনার যদি দেশী কোনো আইটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রোগ্রামিং শিখার ইচ্ছে থাকে। তাহলে আপনার নিজ দায়িত্ব নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন। আপনার অবস্থান ভুল যায়গায় হলে টাকা, সময়, দুটোই জলে যেতে পারে!
এছাড়া যদি আরো ভালো কিছু রিসোর্স খুঁজে থাকেন তাহলে এই গিটহাব লিংক ফলো করতে পারেন। এখানে সব ধরনের প্রোগ্রামিং রিসোর্স খুঁজে পাবেন।
এছাড়া ইংরেজিতে শিখতে চাইলে তো টিউটরিয়াল এর অভাব নেই। শুধু গুগল আর ইউটিউব এ একটু সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। এছাড়া আরো কোন হেল্প লাগলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমরা আপনাকে প্রোগ্রামিং শেখার জন্যে যথাযথ ভাবে সহযোগিতা করবো।
পরিশেষে
আশা করি প্রোগ্রামিং কি এবং কিভাবে কাজ করে সকল বিষয় নিয়ে আপনার মনের সব প্রশ্নের উত্তর আজকের আর্টিকেল থেকে পেয়ে গেছেন। প্রোগ্রামিং শিখে বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে জানাই আগাম শুভেচ্ছা। যদি আরো কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে জানিয়ে দিন কমেন্ট করে। আর প্রোগ্রামিং নিয়ে আরো জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট। ধন্যবাদ