ভিপিএন কি? কিভাবে কাজ করে ভিপিএন?

আপনি যদি কোনো পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকেন। সেক্ষেত্রে আপনার আইপি লোকেশন পার্সোনাল ডাটা কিংবা আরো অন্য কোনো তথ্য এক নিমিষেই কারো কাছে পৌঁছে যেতে পারে! এমনকি আপনি কখন ইন্টারনেটে কি করেছেন। কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন এবং আপনার ব্রাউজিং হিস্টুরিও কোনো মানুষের কাছে চলে যেতে পারে! তো সেক্ষেত্রে তথ্যগুলি পার্সোনাল ভাবে রাখতে হলে আপনাকে ভিপিএন ব্যবহার করতেই হবে। আজ আমি আমার এই আর্টিকেলটিতে ভিপিএন কি? ভিপিএন যেভাবে কাজ করে, ভিপিএন কেনো ব্যবহার করা হয়। সুবিধে এবং আসুবিধে সহ সকল বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা করব।

ভিপিএন কি?

ভিপিএন এর সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Virtual Private Network (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)
যদি আপনি ডিভাইসে ভিপিএন ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ এবং সমস্থ তথ্য সিকিউর বা প্রাইভেট হয়ে যাবে। তখন আপনি ইন্টারনেটে কি করছেন। কার সাথে কি ডেটা আদান-প্রদান করতেছেন। আপনি কোন ঠিকানা থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতেছেন। এ সমস্ত তথ্য চাইলেও শুধু আপনি ছাড়া আর কেউ আর জানতে পারবে না।

ভিপিএন কিভাবে কাজ করে?

ভিপিএন যখন আপনি কানেক্ট বা চালু করেন। তখন আপনার ইন্টারনেট সংযোগকে এনক্রিপ্ট করে। আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল এর আসল আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্য কোনো দেশ বা শহরের ঠিকানাতে নতুন করে আরেকটি আইপি ঠিকানা তৈরি করে। আপনি যদি ভিপিএন ব্যবহার করে কারো সাথে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। তাহলে তথ্যগুলি প্রথমে আপনার ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (ISP) সার্ভারে চলে না গিয়ে,আপনার ব্যবহারিক ভিপিএন সার্ভারে যাবে। তারপর ভিপিএন তার (Virtual Tunnel) এর মাধ্যমে আপনি যার সাথে তথ্য আদান-প্রদান করবেন তার কাছে পৌঁছে দিবে। অতএব, আপনার লোকেশন, আইপি ঠিকানা, এবং পার্সোনাল তথ্য গোপনীয় ভাবে রেখে ভিপিএন নিজ থেকে আরেকটি আইপি ঠিকানা বানিয়ে অন্য একটি দেশ বা শহরের লোকেশন এর মাধ্যমে আপনাকে গোপনীয়তা দিবে।

ভিপিএন কতোটা নিরাপদ?

আপনি কি জানেন ভিপিএন কতোটা নিরাপদ? আপনি ভিপিএন ব্যবহার করতেছেন অসৎ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) ও কোনো পাবলিক ইন্টারনেট সার্ভার থেকে নিজেকে এনস্ক্রিপ্ট করার জন্য। বা ইন্টারনেট থেকে নিজের তথ্যকে গোপন রাখার জন্য। যদি এমনটা হয় আপনার ব্যবহার করা ভিপিএন আপনার পার্সোনাল তথ্যগুলিকে সংগ্রহ করছে? এমনকি আপনি কখন ইন্টারনেটের মধ্যে কি করতেছেন সব অনুসরণ করতেছে। হ্যা, এমনটা স্বাভাবিক বলে আমি মনে করি। কেননা- আপনি যদি এমনি ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এরকম ঘটনা আপনার মধ্যেও ঘটে যাবে। একবার চিন্তা করে দেখুন। যেখানে পেইড ভিপিএন কোম্পানিগুলি ভিপিএন কেনার জন্য প্রতি মাসে মিনিমাম ১০-১২ ডলার করে অর্থ নিয়ে নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে এমনি ভিপিএন কোম্পানিগুলি তাঁদের কোন স্বার্থের জন্য আপনাকে এমনি তে ভিপিএন সার্ভিস দিচ্ছে। তা আপনি এতক্ষণে ভালো করেই বুঝে গেছেন। ইন্টারনেটে খুঁজলে আপনি অনেক এমনিতেই ভিপিএন পাবেন। তাই আমি এইসব ভিপিএন সবসময় এরিয়ে চলতে বলব। প্রতিমাসে কিছু টাকা খরচ করলেই আপনি পেইড ভিপিএন সহজেই কিনতে পারবেন।

কখন আপনার ভিপিএন ব্যবহার করার প্রয়োজন পরবে?

আমাদের অনেক সময় অনেক কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করার অত্যান্ত প্রয়োজনীয়তা পরে যায় যেমনঃ

  • আইপি লোকানোর জন্য:আপনার যদি কোনো কারনে আইপি ঠিকানা লোকানোর প্রয়োজন পরে। তাহলে ভিপিএন কানেক্ট করলে আপনার আইপি ঠিকানা লুকিয়ে ভিপিএন নিজ থেকে আরেকটা আইপি তৈরি করবে।
  • এনক্রিপ্ট করে ডেটা হস্তান্তর করা: আপনি যদি পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। তাহলে অনলাইনে নিরাপত্তার একটু ঝুঁকি থেকেই যায়। আর সেই জন্যই আপনার ডিভাইসকে এনক্রিপ্ট করে ডেটা হস্তান্তর করার লক্ষ্যে ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।
  • অবরুদ্ধ ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করা: ধরুন, কোনো ওয়েবসাইট আমাদের বাংলাদেশ থেকে অ্যাক্সেস করতে দিবে না। সেক্ষেত্রে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে অন্যকোনো দেশের ঠিকানা ব্যবহার করে সেই ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

সেরা কয়েকটি ভিপিএন

  • ExpressVPN:

    ExpressVPN সারা বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় একটি ভিপিএন। এই ভিপিএন এর প্রায় ৯৪টি দেশে ৩০০০+ সার্ভার রয়েছে।এই ভিপিএন এর সার্ভিসটি কিনতে ১২.৯৫ ডলার লাগবে। এবং আপনি যদি ১২ মাসের জন্য একসাথে কিনেন তাহলে ৩৫% ডিসকাউন্ট পাবেন।

  • NordVPN:

    NordVPN এর প্রায় ৫000+ সার্ভার রয়েছে।এই ভিপিএন এর সার্ভিসটি কিনতে ১১.৯৫ ডলার লাগবে। এবং আপনি যদি ১২ মাসের জন্য একসাথে কিনেন তাহলে কিছুটা ডিসকাউন্ট পাবেন।

  • ipVanish:

    ipVanish এর প্রায় ১২০০+ সার্ভার রয়েছে।এবং ৬০+সার্ভার ঠিকানা রয়েছে। এই ভিপিএন এর সার্ভিসটি কিনতে ১১.৯৯ ডলার লাগবে। এবং আপনি যদি ১২ মাসের জন্য একসাথে কিনেন তাহলে ৪৬% ডিসকাউন্ট পাবেন।

  • StrongVPN:

    StrongVPN এর প্রায় ৬৫০+ সার্ভার রয়েছে। এবং ২৬+ সার্ভার ঠিকানা রয়েছে। এই ভিপিএন এর সার্ভিসটি কিনতে ১০ ডলার লাগবে। এবং আপনি যদি ১২ মাসের জন্য একসাথে কিনেন তাহলে ৪২% ডিসকাউন্ট পাবেন।

আমি সবসময় এই ভিপিএন গুলোই ব্যবহার করতে বলব। তাছারা এরকম রিলেটেড আরো ভাল ভাল পেইড ভিপিএন খুঁজে পাবেন। আপনি সেগুলিও ব্যবহার করতে পারেন। আর যেকোনো ভিপিএন ব্যবহার করার আগে ভিপিএনটি কেমন রিভিউটি ভালভাবে চেক করে নিবেন।

ভিপিএন এর সুবিধে ও অসুবিধে!

ভিপিএন এর সুবিধে হয়তো আপনি আর্টিকেলটি ভালোভাবে পরলে নিজ থেকেই বুজতে পারবেন। আপনি যদি পেইড ভিপিএন ব্যবহার করেন। তাহলে আশাকরি ভিপিএন এর সকল সুবিধেই পাবেন। আর যদি ফ্রী ভিপিএন ব্যবহার করে কাজ চালাতে যান। তাহলে আপনাকে অনেক অসুবিধের মধ্যেই পরতে হতে পারে। সো, পেইড ভিপিএন নো টেনশন!

শেষ কথা!

এই আর্টিকেলে আমি ভিপিএন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশাকরি আপনারা যারা ভিপিএন সম্পর্কে জানতেন না। তারা হয়তো আমার আর্টিকেলটি পরে ভিপিএন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ভিপিএন সম্পর্কে যদি আরো কিছু জানার থাকে। অথবা ভিপিএন সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যায় কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। আমি সঠিক উত্তর দিয়ে আপনার সমস্যার সমধান করার চেষ্টা করব। আর আমার এই আর্টিকেলটি যদি ভাল লাগে তাহলে আপনার ফেইসবুকের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

You May Also Like

আনছের আলী

About the Author: আনছের আলী

ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ প্রযুক্তির উপর। আর এই আগ্রহ থেকেই জাগ্রত হয়েছে প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার এবং জানানোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!